গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ সম্পূর্ণ বিস্তারিত জানুন
BD Tips Corner
1 May, 2025
গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ অনেক সময় সরাসরি বোঝা কঠিন হলেও দেহে
কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি ধারণা করা যায়। এ সময় নারীর শরীরে হরমোন
জনিত কিছু পরিবর্তন শুরু হয় যা গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে
পারে। সাধারণত মাসিক বন্ধ হওয়া,অতিরিক্ত ক্লান্তি,বমি বমি ভাব,স্তনের
সংবেদনশীলতা এবং মুডে হঠাৎ পরিবর্তন অন্যতম লক্ষণ।
অনেক সময় তলপেটে হালকা টান বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে যা ভ্রুনের প্রাথমিক স্থাপন
প্রক্রিয়ার ফল। যদিও এই লক্ষণগুলো অনেকটাই ষ্টোরোয়াল সিনড্রোম মত
মনে হতে পারে তবে এগুলোর উপস্থিতি গর্ভাবস্থার সম্ভাবনার একটি ইঙ্গিত দিতে পারে।
তাই এই সময় নারীদের উচিত নিজের শরীরের পরিবর্তনগুলোর প্রতি সচেতন থাকা এবং
প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ হল নারীর দেহে বেশ কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন দেখা দেয়
যা গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যদিও অনেক নারী এই সময়
গর্ভাবস্থার বিষয়টি বুঝতে পারেন না তবে শরীরের কিছু প্রতিক্রিয়া গর্ভধারণের
ইঙ্গিত দিতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ ও প্রাথমিক লক্ষণ হলো মাসিক বন্ধ হওয়া যদিও
মাসিক মিস হওয়া সব সময় গর্ভধারণের লক্ষণ নয় তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
এই সময় স্তনে ব্যথা বা সংবেদনশীলতা দেখা দিতে পারে স্তনের আকার কিছুটা বড় বা
ফুলে যাওয়া অনুভূত হয় এবং স্তনের রং ডার্ক হয়ে যেতে পারে।
এছাড়াও ক্লান্তি ভাব,মাথা ঘোরা,অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব এবং তন্দ্রাচ্ছন্নতা অনুভব
হয়। শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে বমি বমি ভাব বা সকালের অসুস্থতা শুরু হতে
পারে যদিও এটি সাধারণত দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বেশি দেখা যায়। হরমোনের তারতম্যের
ফলে মেজাজে ওঠানামা,অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা এবং মন মেজাজ এর হঠাৎ পরিবর্তন ঘটতে
পারে। কিছু নারী খাবারের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ বা বিরক্তি অনুভব করেন যাকে
ক্রেভিং বা ফুড এভারশন বলা হয়।
এ সময় তলপেটে হালকা ব্যথা বা চাপ অনুভব হতে পারে যা ভ্রুনের জরায়ুতে স্থাপন
প্রক্রিয়ার কারণে হয়। মৃদু রক্তপাত বা স্পোর্টিং দেখা দিতে পারে যাকে
ইমপ্লাটেশন ব্লিডিং বলা হয়। যদিও এই লক্ষণগুলো একেক জন নারীর ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে
দেখা দিতে পারে তবে শরীরে এই পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করা গেলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা
বিবেচনা করে একটি ঘরোয়া প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা উচিত এবং নিশ্চিত হলে চিকিৎসকের
পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
মাসিক বন্ধ হওয়া
মাসিক বন্ধ হওয়া গর্ভধারণের সবচেয়ে প্রচলিত এবং প্রথম লক্ষণ গুলোর একটি।
প্রতিটি প্রজনন সক্ষম নারীর শরীরে নিয়মিত মাসিক চক্র ঘটে যা গর্ভধারণ না হলে
জরায়ুর আস্তরণ বেরিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। কিন্তু যদি নিষিদ্ধ
ডিম্বানু জরায়ুতে স্থাপন পায় এবং গর্ভধারণ ঘটে তাহলে সেই আস্তরন শরীর ধরে রাখে
এবং মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। এটি শরীরের হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে ঘটে বিশেষত
প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে হয়।
গর্ভধারণের একেবারে প্রথম দিকে অনেক নারী মাসিক বন্ধ হওয়াকে গর্ভবতী হওয়ার একটি
ইঙ্গিত হিসেবে অনুভব করেন। যদিও স্ট্রেস,হরমোন জনিত সমস্যা,অতিরিক্ত ওজন,অনিয়মিত
জীবন যাপন বা কিছু ওষুধের প্রভাবে মাসিক বন্ধ হতে পারে তবে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে
এটি একটি প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ে মাসিক না
হলে অনেকে প্রথমেই প্রেগনেন্সি টেস্ট করে নিশ্চিত হন।
তবে কিছু ক্ষেত্রে গর্ভধারণের পরও হালকা রক্তপাত বা স্পোটিং হতে পারে যাকে অনেকে
মাসিক ভেবে ভুল করেন। তাই মাসিক বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি যদি অন্য লক্ষণ যেমন-বমি
বমি ভাব,ক্লান্তি,স্তনের পরিবর্তন বা হরমোন জনিত অসুবিধা দেখা দেয়
তাহলে গর্ভাবস্থার সম্ভাবনা আরো বেশি হয়। এই অবস্থায় একজন নারী যদি সন্তান
নেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন বা গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে তাহলে মাসিক বন্ধ হওয়া
অবহেলা না করে দ্রুত প্রেগনেন্সি টেস্ট করা উচিত। গর্ভধারণ নিশ্চিত হলে যত দ্রুত
সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয় যেন মায়ের এবং অনাগত সন্তানের সুস্থতা
নিশ্চিত করা যায়।
স্তনের সংবেদনশীলতা ও ফোলা
গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ হলো স্তনের সংবেদনশীলতা ও ফোলা।
অনেক নারী গর্ভাবস্থার একেবারে শুরুতেই স্তনে অস্বাভাবিক ব্যথা,টান বা ভারি লাগা
অনুভব করেন যা মাসিক আগে হওয়া স্তনের ব্যথার চেয়েও বেশি তীব্র হতে পারে।
এই পরিবর্তন মূলত শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে ঘটে বিশেষ করে প্রজেস্টেরন ও
ইস্ট্রোজেন হরমোন এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে স্তনের রক্ত প্রবাহ বাড়ে এবং
স্তনের কোষ গুলোর বৃদ্ধি ঘটে। এর ফলে স্তন ফুলে ওঠে এবং স্পর্শের সংবেদনশীল
হয়ে পড়ে।
এই সময়ের স্তনের আকার সামান্য বড় হয়ে যেতে পারে এবং স্তনের চারপাশের ডার্ক অংশ
অর্থাৎ অ্যারিওলাভ আরো ডার্ক হয়ে যায়। অনেক নারী লক্ষ্য করেন যে তাদের স্তনের
ছোট ছোট গুটিপাতা না দেখা যায় যেগুলোকে মন গোমেরই গ্ল্যান্ড বলা হয় এবং এগুলো
দুধ উৎপাদনের প্রস্তুতির অংশ। এ ছাড়া স্তনে চুলকানি বা হালকা জ্বালাবো হতে পারে
কারণ ত্বক প্রসারিত হতে শুরু করে। অনেক সংবেদনশীলতা সাধারণত গর্ব অবস্থায় প্রথম
কয়েক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি থাকে এবং দ্বিতীয় তিন মাসে গিয়ে কিছুটা কমে যেতে
পারে যখন শরীর নতুন হরমোনের মাত্রা সাথে মানিয়ে নিতে শুরু করে। তবে এই লক্ষণটি
সকল নারীর ক্ষেত্রে একরকম হয় না কেউ কেউ খুব অল্প পরিবর্তন টের পান আবার কারো
ক্ষেত্রে এটি অনেক বেশি স্পষ্ট হতে পারে।
যেহেতু স্তনের সংবেদনশীলতা মাসিকের আগেও হয়ে থাকে তাই এটি একা কোনো নিশ্চিত
লক্ষণ নয়। তবে এটি যদি মাসিক বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় তাহলে
গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায় এবং এটি প্রেগনেন্সি টেস্ট করা
যুক্তিসঙ্গত।
অতিরিক্ত ক্লান্তি ও নিদ্রাচাহিদা
গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ অনেক নারী অতিরিক্ত ক্লান্তি ও নিদ্রা চাহিদা অনুভব করেন
যা গর্ভাবস্থার একটি অন্যতম সাধারণ ও প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত। প্রথম
সপ্তাহ থেকেই শরীরে নানা ধরনের হরমোনগত পরিবর্তন শুরু হয় বিশেষ করে প্রোজেস্টেরন
হরমোনের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায়। এই হরমোন শরীরকে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে
তুলতে সাহায্য করে কিন্তু এর একটি প্রভাব হল একটি নারীর মধ্যে তন্দ্রাচ্ছন্নতা বা
ঘুমঘুম ভাব তৈরি করে।
গর্ভাবস্থার শুরুতে শরীরের রক্তচাপ কিছুটা কমে যায় রক্তে চিনে পা গ্লুকোজের
মাত্রা ও পরিবর্তিত হয় এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। এসব পরিবর্তনের কারণে শরীর
স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি পরিশ্রান্ত বোধ করে। এমনকি খুব সাধারন কাজ করার
পরেও দুর্বলতা বা অবসাদ অনুভব হতে পারে। এ সময় অনেক নারীর পক্ষে আগের মত
সক্রিয় থাকা কঠিন হয়ে পড়ে এবং তারা দিনে একাধিকবার বিশ্রাম নিতে বা ঘুমাতে
ইচ্ছুক হন।
অতিরিক্ত ক্লান্তির কারণে কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে মনোযোগের ঘাটতি দেখা দিতে
পারে এবং মানসিকভাবে বিরক্ত বা হতাশ লাগতে পারে। তবে এটি শরীরের একটি স্বাভাবিক
প্রতিক্রিয়া কারণ গর্ভাবস্থার শুরু থেকে শরীর ভ্রুন গঠনের জন্য কঠোরভাবে কাজ
করতে থাকে। এই ক্লান্তি সাধারণত প্রথম তিন মাস সবচেয়ে বেশি থাকে এবং দ্বিতীয়
তিন মাসে গিয়ে কিছুটা হ্রাস পায়।
এই সময়ে নারীদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম পুষ্টিকর খাবার এবং হালকা ব্যায়াম করা উচিত
যাতে শরীরের শক্তি বজায় থাকে। যদি ক্লান্তি খুব বেশি হয় বা দৈনন্দিন কাজে
ব্যাঘাত ঘটায় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। অতিরিক্ত ক্লান্তি ও
নিদ্রা চাহিদা গর্ভাবস্থার একটি স্বাভাবিক লক্ষণ হলেও যত্ন ও সচেতনতা জরুরি।
বমি বমি ভাব বা মর্নিং সিকনেস
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ গুলোর মধ্যে বমি বমি ভাব মর্নিং সিকনেস অন্যতম পরিচিত
ও সাধারণ একটি উপসর্গ। এটি সাধারণত গর্ভধারণের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহ থেকে
শুরু হয় এবং প্রথম তিন মাসের সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যদিও কিছু নারীর ক্ষেত্রে
এটি গর্ব অবস্থায় শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মর্নিং সিকনেস নামটি শুনে মনে
হতে পারে এটি শুধুমাত্র সকালে হয় কিন্তু বাস্তবে এই বমি বমি ভাব সারাদিন যে কোন
সময়ই দেখা দিতে পারে।
এই উপসর্গের প্রধান কারণ হলো হরমোন গত পরিবর্তন বিশেষ করে এইচসিজি হরমোনের
মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি। এছাড়া ও প্রোজেস্টেরনের তারতম্য,গন্ধের প্রতি
অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা এবং হজম প্রক্রিয়ার পরিবর্তনের কারণেও বমি বমি ভাব দেখা
দিতে পারে। অনেক নারী বিশেষ কিছু গন্ধ খাবার বা এমন কি খালি পেট থাকলে বমি বমি
ভাব অনুভব করেন।
যদিও এটি খুবই অস্বস্তিকর তবে সাধারণত এটি মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর নয় বরং
গবেষণায় দেখা গেছে যেসব নারীর মর্নিং সিকনেস বেশি হয় তাদের গর্ভাবস্থার সাধারণত
স্থিতিশীল থাকে। তবে অতিরিক্ত বমি যেমন-হাইপার এমএসএস গ্রাভিডারাম হলে তার
শরীরে পানি শূন্যতা ও অপুষ্টির কারণ হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ
নেওয়া জরুরী। এই সময় হালকা ও সহজপাচ্চ খাবার খাওয়া,ঘন ঘন অল্প করে খাওয়া এবং
গন্ধ বা খাবারের প্রতি সচেতনতা রাখলে উপসর্গ কিছুটা কমে আসতে পারে।
মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগা
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে অনেক নারী মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন
যা একটি সাধারন ও স্বাভাবিক লক্ষণ। এই অনুভূতির প্রধান কারণ হলো শরীরে হরমোনের
দ্রুত পরিবর্তন বিশেষ করে প্রোজেস্টেরন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। এটি
রক্তনালী গুলোকে প্রসারিত করে যার ফলে রক্তচাপ কিছুটা কমে যায় এবং মস্তিষ্কের
রক্ত প্রবাহ হঠাৎ করে কমে যেতে পারে। এর ফলে মাথা ঘোরার অনুভূতি তৈরি হয়।
গর্ভধারণের শুরুতে শরীরে চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত রক্ত তৈরি শুরু হয় কিন্তু সেই
সাথে যদি পর্যাপ্ত পানি বা পুষ্টি গ্রহণ না করা হয় তাহলে শরীরে পানি শূন্যতা
দেখা দিতে পারে যা মাথা ঘোরা বা দুর্বলতার আরেকটি বড় কারণ। অনেক সময় খালি পেটে
থাকা দীর্ঘ সময় না খাওয়া,হঠাৎ করে উঠে দাঁড়ানো বা অতিরিক্ত গরমে অবস্থান করলেও
মাথা ঘুরার অনুভূতি বাড়তে পারে।
এই উপসর্গটি যদি হালকা মাত্রায় হয় তাহলে সাধারণত তার চিন্তার কিছু নয় এবং
পর্যাপ্ত বিশ্রাম সুষম খাবার ও হাইড্রেশন বজায় রাখার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে
রাখা যায়। তবে মাথা ঘোরা যদি ঘন ঘন হয় জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মত অনুভূতি আসে বা
অন্য কোন জটিলতা যেমন-বুক ধরফর করা বা দৃষ্টিতে ঝাপসা দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। গর্ভাবস্থার প্রতিটি ছোট লক্ষণ গুরুত্ব সহকারে
পর্যবেক্ষণ করাই মায়ের ও অনাগত শিশুর সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
খাবারের প্রতি আকর্ষণ বা বিতৃষ্ণা
গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে খাবারের প্রতি আকর্ষণ বা বিতৃষ্ণা একটি খুবই সাধারণ এবং
পরিচিত লক্ষণ। অনেক নারী এ সময় হঠাৎ করে কিছু নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি তীব্র
ইচ্ছা বা ক্রেভিং অনুভব করেন আবার কিছু খাবারের গন্ধ বা স্বাদ অসহ্য লাগতে শুরু
করে। এই পরিবর্তনগুলো মূলত শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘটে বিশেষ করে
ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন মাত্রা বেড়ে যাওয়া নারী স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতিতে
প্রভাব পড়ে।
গর্ভধারণের একেবারে প্রথম দিকে কিছু খাবার যেগুলো আগে খুব প্রিয় ছিল তা হঠাৎ
অরুচি কর মনে হতে পারে আবার এমন কিছু খাবারের প্রতি আকর্ষণ দেখা দিতে পারে যেগুলো
আগে খেতে ইচ্ছে হতো না। কখনো কখনো এই ক্লেভিং এমনকি অস্বাভাবিক খাবারের
প্রতিও হতে পারে যাকে পিকা বলা হয় যেমন-কাঁচা চাল,মাটি বা বরফ খাওয়ার ইচ্ছা।
যদিও এই ধরনের আকাঙ্ক্ষা বিপদজনক হতে পারে তাই এমন কিছু অনুভব করলে দ্রুত
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অন্যদিকে গন্ধের প্রতি অতি সংবেদনশীলতা থেকেও অনেক সময় নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি
বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়। রান্নার গন্ধ,মাছ,মাংস বা মসলাযুক্ত খাবারের গন্ধ অনেক
নারীকে বমি বমি লাগতে পারে। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সাধারণত প্রথম তিন মাসে বেশি
দেখা যায় এবং পরে কিছুটা হ্রাস পায়। গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
অত্যন্ত জরুরি তাই খাবারের প্রতি বিদ্বেষ না থাকলেও বিকল্প ভাবে সুষম আহার
নিশ্চিত করার চেষ্টা করা উচিত। মায়ের স্বাস্থ্যের ওপর এর সরাসরি প্রভাব পড়ে যা
ভবিষ্যতে শিশু সুস্থ বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
হালকা রক্তপাত বা স্পটিং
হালকা রক্তপাত বা স্পর্টিং হল এমন একটি অবস্থা যেখানে সাধারণত মাসিকের বাইরে বা
অল্প পরিমাণে রক্তপাত ঘটে। এটি সাধারণত মাসিক চক্রের মধ্যে ঘটে কিন্তু কখনো কখনো
কোনো ধরনের রোগ বা শারীরিক সমস্যা থেকেও এটি হতে পারে। এই রক্তপাতটি খুবই কম হয়
এবং সাধারণত একবার দুইদিন স্থায়ী হয়। অনেক সময় এটি মাসিকের আগে বা পরে ঘটে এবং
অনেক নারীর জন্য এটি একেবারেই স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে যদি
স্পটিং নিয়মিত হয়ে থাকে বা অন্য কোন অস্বাভাবিক উপসর্গ যেমন-পেটের
যন্ত্রণা,ভারী রক্তপাত বা অস্বাভাবিক সময় ধরে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ
নেওয়া উচিত।
স্পটিং অনেক কারণে হতে পারে যেমন-হরমোনের পরিবর্তন,গর্ভধারণের প্রথম
দিকে,জন্মনিরোধক পদ্ধতির ব্যবহার স্ট্রেস বা শারীরিক পরিশ্রমের কারণে। কিছু
ক্ষেত্রে এই ধরনের রক্তপাত গর্ভাবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে যেমন-গর্ভধারণের
শুরুতে বা মিস ক্যারেজের সময়ে। তবে যদি স্পোটিং বেশি দিন স্থায়ী হয় বা এটি কোন
গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হয় যেমন-ইউটেরাইন ইনফেকশন বা পলিপ তবে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার
প্রয়োজন।
FAQ/সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃগর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ কি?
উত্তরঃপ্রথম সপ্তাহে অনেক নারী কিছু লক্ষণ যেমন-সামান্য ক্লান্তি বা মেজাজ
পরিবর্তন অনুভব করতে পারেন।
প্রশ্নঃগর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কি রক্তপাত হতে পারে?
উত্তরঃহ্যাঁ কিছু নারীর গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহে হালকা রক্তপাত বা স্পটিং হতে
পারে।
প্রশ্নঃগর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কি নাক বন্ধ হয়ে যায়?
উত্তরঃহ্যাঁ গর্ভাবস্থার প্রাথমিক সপ্তাহগুলোতে হরমোনের পরিবর্তনে নাক বন্ধ হতে
পারে।
প্রশ্নঃগর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কি পেটে ব্যথা হতে পারে?
উত্তরঃহ্যাঁ কিছু নারী প্রথম সপ্তাহে পেটে হালকা টান বা ব্যথা অনুভব করেন যা
স্বাভাবিক।
প্রশ্নঃগর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কি মেজাজ পরিবর্তন হয়?
উত্তরঃহ্যাঁ হওয়ার মনের পরিবর্তনের কারণে মেজাজ পরিবর্তন হতে পারে যেমন অবসাদ বা
উত্তেজনা।
প্রশ্নঃগর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কি বমি হতে পারে?
উত্তরঃকিছু নারীর প্রথম সপ্তাহে হালকা বমি অনুভব হতে পারে যদিও এটি সাধারণ সপ্তাহ
চার বা পাঁচ এ শুরু হয়।
প্রশ্নঃগর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কি স্তন বড় বা সংবেদনশীল হয়?
উত্তরঃহ্যাঁ গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের স্তন বড় ও সংবেদনশীল হতে পারে।
প্রশ্নঃগর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কি খাবারের প্রতি আকর্ষণ পরিবর্তিত হয়?
উত্তরঃহ্যাঁ গর্ভাবস্থায় প্রথম সপ্তাহে কিছু নারী খাবারের প্রতি অদ্ভুত আকর্ষণ
বা বিকৃতি অনুভব করতে পারে।
প্রশ্নঃগর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কি ক্লান্তি অনুভূত হয়?
উত্তরঃহ্যাঁ প্রথম সপ্তাহে শরীরে পরিবর্তন আসার কারণে ক্লান্তি অনুভব হতে
পারে।
প্রশ্নঃগর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে কি কোন টেস্ট যে নিশ্চিত হওয়া
যায়?
উত্তরঃগর্ভাবস্থায় প্রথম সপ্তাহে বেশিরভাগ সময় গর্ভধারণ টেস্টের ফলাফল সঠিকভাবে
আসে না সাধারণত ১০ থেকে ১৪ দিন পরে সঠিক ফল পাওয়া যায়।
লেখকের মন্তব্যঃগর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ
গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ অনেক নারী শারীরিক বা মানসিক কিছু পরিবর্তন অনুভব
করতে পারেন তবে এই লক্ষণ গুলি সাধারণত খুবই সূক্ষ্ম এবং বিভ্রান্তিকর হতে পারে।
প্রথম সপ্তাহে গর্ভাবস্থার কোন স্পষ্ট এবং দৃশ্যমান লক্ষণ দেখা যায় না কারণ
গর্ভের ভ্রুন সাধারণত তখন স্থির ভাবে প্রাথমিকভাবে নিজেকে বাসা বাঁধছে। অনেক সময়
হালকা রক্তপাত বা স্পটিং,স্তন সংবেদনশীলতা,ক্লান্তি,মেজাজ পরিবর্তন এবং কিছু
খাদ্য প্রতি আকর্ষণের পরিবর্তন দেখা যেতে পারে তবে এগুলো সবই একে অপরের সাথে
মিলিত হতে পারে বা শুধু হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে ঘটতে পারে।
এটি একটি খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে তাই অধিকাংশ সময় এই লক্ষণগুলো গর্ভাবস্থায়
সাথে সম্পর্কিত নাও হতে পারে। তবে গর্ভধারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য সময় মত
গর্ভাবস্থায় টেস্ট করা প্রয়োজন। যেহেতু প্রথম সপ্তাহে শরীরের অনেক পরিবর্তন
শুরু হয় তাই কোন অস্বাভাবিক বা অবাঞ্ছিত লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ
নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয় পাঠক, আশা করি এই কনটেন্টি আপনাদের ভালো
লাগবে এবং এই কনটেন্টের দ্বারা আপনি উপকৃত হতে পারবেন। যদি এই কনটেন্টি পড়ে
আপনি উপকৃত হন তবে এই কন্টেনটি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের নিকট
শেয়ার করতে পারেন যাতে তারা এই কনটেন্টটি পরে উপকৃত হতে পারে।
বিডি টিপস কর্নারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url